- Home
- বজ্রপাত কেন হয়?
ছোটবেলায় শিখেছিলাম, মেঘে মেঘে ঘর্ষণে ফলে বজ্রপাত হয়, কিন্তু বিষয়টি একদমই ভুল!
সূর্যের তাপে পানি যখন বাষ্প হয়ে ক্রমশ আকাশের দিকে উঠতে থাকে তখন এই বাষ্প কণার সাথে মেঘের নিম্ন প্রান্তে ঘনীভূত তুষার কণার সংঘর্ষ হয়। যার ফলে ঊর্ধগামী কিছু বাষ্প কণা ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং পজিটিভ চার্জ ধারণ করে মেঘের উপরের তলে অবস্থান নেয়। মুক্ত ইলেকট্রনগুলো মেঘের নিম্নতলে জমা হয় এবং অনেক জলকণা সে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে পরিণত হয়।
ফলশ্রুতিতে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর এর বৈশিষ্ট্য লাভ করে। মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
অনবরত এই ঘটনা চলতে থাকলে একসময় মেঘে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটা শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে মেঘের নিম্ন প্রান্তের ইলেকট্রন বা নেগেটিভ চার্জের বিকর্ষণের কারনে পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকা ইলেকট্রনগুলো মাটির আরো গভীরে চলে যায়। ফলাফলস্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুত ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এবার উপরে নেগেটিভ চার্জ আর নিচে পজেটিভ মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দিয়ে আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে ভাগ হয়ে যায়। এই আয়নিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর উপস্থিত থাকলেই বাতাস আয়নিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুত চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়।
এখন প্রশ্ন হল, বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ কোথা থেকে আসে?
আমরা পাঠ্যপুস্তকের জারন-বিজারন ধারণা থেকে জানি,কোনো ধাতুর সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াই হল জারন। আয়নিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ার কারণে এতে ধাতুর বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে বিদ্যমান। তাই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়।
আর বজ্রপাতে কেন শব্দ হয়?
মেঘের নেগেটিভ চার্জ যখন বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় তখন বাতাসের তাপমাত্রা সূর্যের তাপমাত্রার চাইতে বেশি প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রি সে. এ উন্নীত হয়। বাতাসের চাপ আগের থেকে প্রায় ১০ থেকে ১০০ গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাপমাত্রা ও চাপের এত ব্যাপক পরিবর্তন চারপাশের বায়ু মন্ডলকে প্রচন্ড গতিতে প্রায় বিষ্ফোরণের মত সম্প্রসারিত করে। এ সময় যে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয় সেটাই আমরা শুনতে পাই ।
তাহলে বজ্রপাত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের জন্য নয়, বরং চার্জ আদান-প্রদানের জন্য হয়!