- Home
- মুক্তোর যত রহস্য
রত্নপাথর নিয়ে রহস্যের সূচনার বয়সটা হিসেব করা অসম্ভব, কিন্তু প্রাচীনতম রত্নের নামটা কি আমরা জানি? আদিম মানুষ সমুদ্র তীরে খাদ্যের সন্ধান করতে গিয়ে ঝিনুক থেকে শুভ্র মুক্তো আবিষ্কার করে। এত মূল্যবান একটা বস্তু সামান্য ঝিনুকেই বা কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে কি কখনো প্রশ্ন জাগেনি মনে? আশ্চর্য হলেও সত্য, যাকে আমরা রত্ন হিসেবে জানি, তা ঝিনুকের শরীরে বর্জ্য একটি বস্তু!
ঝিনুকের খোলসে থাকে যথাক্রমে পেরিওস্ট্রাকাম, প্রিজমাটিক ও সবচেয়ে ভেতরের স্তরটির নাম ন্যাক্রস (Nacreous). এই Nacreous স্তরটিকে “Mother of Pearl” বলা হয়। Nacreous স্তরটি থেকে Nacre নিঃসৃত হয় যা ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও কংকিওলিন নামের প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ঝিনুকের দেহে ম্যান্টল টিস্যু (Mantle tissue) নামক বিশেষ টিস্যু থাকে, যাতে কোন বাহ্যিক বস্তুকণা, ক্ষুদ্র প্রাণি বা অণুজীব প্রবেশ করলে এরা অনুপ্রবেশকারীকে পরজীবি হিসেবে ধরে নেয় এবং শারীরিক প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে বস্তুটিকে ঘিরে Pearl sac তৈরি হয় যা থেকে Nacre নিসৃত হয়। এই আবরণটি ম্যান্টল টিস্যুতে প্রবেশকৃত কণাটিকে সম্পূর্ণ আবৃত করে ফেলে ধীরে ধীরে আর এভাবেই প্রবেশকৃত কণাটিকে ঘিরে মুক্তা তৈরি হয়।
অর্থাৎ যাকে আমরা মুক্তো হিসেবে জানি তা কেবল ১০-১৪% কংকিওলিন, ২-৪% পানি আর ৮২-৮৬% ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা চুনের একটি ক্রিস্টাল। তাহলে কেন এতো মূল্যবান মুক্তো?
কারণ প্রাকৃতিকভাবে প্রতি ১০,০০০ অয়েস্টার বা ঝিনুকের ১টি তে ব্যবহারযোগ্য গোলাকার মাপের ও রঙের মুক্তো পাওয়া যায় আর মিঠা বা লোনা পানির যেকোনো ঝিনুকে মুক্তো তৈরি হতে ৩-৫ সপ্তাহ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
বিশ্বের বর্তমান সবচেয়ে বড় মুক্তোটি রয়েছে ফিলিপিনে যার ওজন ৩৪ কেজি আর ব্যাস ২৬ ইঞ্চি! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আসল মুক্তোর প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিধায় দুর্বল এসিড যেমন ভিনেগারে মুক্তো গলে যায়, আর পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম অ্যাসিটেট লবণ!
2CH3COOH + CaCO3 = H2O + CO2 + Ca(CH3COO)2