সৃষ্টির আদিকাল থেকেই দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীরদের বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু মানব দেহ। আমরা যেমন ধাপে ধাপে জেনেছি অনেক সাথে অজানারও নেই শেষ। সাধারনভাবে বলা যায়, এই মানবদেহ অণুর ভান্ডার। অণুগুলো পরমাণু (বা মৌল) দিয়েই গঠিত। পর্যায়সারণিতে মোট ১১৮টি মৌল আছে, যার ৯২ টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় আর মাত্র ২৫টি মানবদেহে বিদ্যমান।
অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন(H), নাইট্রোজেন(N), ফসফরাস(P) ও ক্যালসিয়াম(Ca) এই ছয়টি মৌলই আমাদের দেহের প্রায় পুরো ভরকে ধারন করে। কী আশ্চর্য তাই না!
এছাড়াও মানবদেহের আরো রয়েছে আয়রন(Fe), সালফার(S), ম্যাগনেসিয়াম(Mg), ক্লোরিন(Cl), সোডিয়াম(Na), পটাশিয়াম(K), কোবাল্ট(Co), ফ্লোরিন(F) ইত্যাদি মৌল।
আমরা জানি ,মানুষের শরীরে পানির প্রাচুর্যতা রয়েছে তাই এ দেহে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন পরিমাণ অধিক। মানবদেহের অন্যতম উপাদান প্রোটিন যার ক্ষুদ্রাংশ হলো এমাইনো এসিড। এই এমাইনো এসিডে থাকে অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন।
এইবার আসি শর্করাতে! আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য চিনি, ভাত, আলু, রুটি সবই শর্করা। শর্করা এমাইনো এসিডের মত বড় অণু হলেও এর গঠনে তফাৎ রয়েছে। শর্করাতে নাইট্রোজেন থাকে না, তবে থাকে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু।
দেহের কোষে কোষে থাকে ATP(এডেনোসিন ট্রাই ফসফেট)। ATP কে বলা হয় শক্তির আধার অণু যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ফসফরাস পরমাণু যা হাড়েও বিদ্যমান।
এইবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌল নিয়ে বিস্তারিত জানা যাকঃ

অক্সিজেনঃ মানবদেহে সবচেয়ে বেশি পরিমান রয়েছে যে মৌলটি সেটি হল অক্সিজেন, যা শরীরের ভরের প্রায় 65.0% । উপস্থিত অক্সিজেনের অধিকাংশই পানির আকারে পাওয়া যায়।অক্সিজেনের প্রথম কাজ হলো আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করা। কোষের শক্তিঘর “মাইটোকন্ড্রিয়া” অক্সিজেন ব্যবহার করে হজম প্রক্রিয়া থেকে পুষ্টিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে যা কোষ দ্বারা সরাসরি ব্যবহার করা যায় । অক্সিজেন বিপাকীয় এবং শ্বসনকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং নিউক্লিক অ্যাসিড সহ শরীরের প্রতিটি প্রধান জৈব অণুতে পাওয়া যায়।

কার্বনঃ কার্বন মানুষের শরীরের ওজনের প্রায় 18%। কার্বন মানবশরীরে সরাসরি না পাওয়া গেলেও অভ্যন্তরিন যৌগিক পদার্থে পাওয়া যায়। এরা প্রতিটি কোষে হাজার হাজার অণু তৈরির কারিগর ।কার্বন প্রোটিন , কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক বিল্ডিং ব্লক এবং এটি শরীরের শারীরবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার্বনযুক্ত গ্যাসীয় এবং তরল যৌগগুলিও শরীরকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে।সমস্ত জৈব অণুতে কার্বনে্র উপস্থিতি রয়েছে।

হাইড্রোজেনঃ হাইড্রোজেন মহাবিশ্বে সবথেকে বেশি পাওয়া যায় এমন একটি রাসায়নিক মৌল এবং যা মানব দেহের ভরের প্রায় 10%। মানবদেহে হাইড্রোজেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত এবং শরীরের কোষ দ্বারা শোষিত হয়।

নাইট্রোজেনঃ এটি মানব শরীরের ভরের প্রায় 3.3%। এটি প্রোটিন এবং নিউক্লিক অ্যাসিডে পাওয়া যায়।

ক্যালসিয়ামঃ হাড় এবং দাঁত গঠনে ক্যালসিয়ামের অবদান অনবদ্য । এটি মানব শরীরের ভরের প্রায় 1.4%। খাদ্যে ক্যালসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন ধরণের অবক্ষয়মূলক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও প্রোটিন সংশ্লেষণ, কোষের ঝিল্লি জুড়ে সম্ভাব্য পার্থক্য বজায় রাখা এবং সংকেত পরিবহন পথে দ্বিতীয় বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করাতে ক্যালসিয়ামের জুড়ি নেই।

ফসফরাসঃ শরীরের ভর প্রায় 1%। এটি নিউক্লিক অ্যাসিডের অন্যতম উপাদান। ফসফেট অণুগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, বন্ধনগুলির শক্তি স্থানান্তরে এর ভূমিকা রয়েছে।

পটাসিয়ামঃ একটি ব্যক্তির ভরের প্রায় 0.2-0.4% এর কাছাকাছি। এটি মাংসপেশি এবং স্নায়ুর কার্যক্ষমতা সচল রাখতে সাহায্য করে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এবং অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখে। সেই সঙ্গে কমায় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা।

সালফারঃ এটি কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিনে পাওয়া যায়। এটি শরীরের ভরের প্রায় 0.2-0.3%।

সোডিয়ামঃ এটি শরীরের ভরের প্রায় 0.1-0.2%। সোডিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রন করে , রক্ত এবং কোষে পানির আয়তন সম্পর্কে হোমোয়েস্টাসিস বজায় রাখতে সহায়তা করে।
যদিও অ্যালুমিনিয়াম এবং সিলিকন পৃথিবীর ভূত্বক মধ্যে প্রচুর আছে, এদের মানুষের শরীরের মধ্যেও ট্রেস পাওয়া যায়। অন্যান্য ট্রেস উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে ধাতু, যা প্রায়ই এনজাইমগুলির জন্য কোফ্যাক্টর হয়। ট্রেস উপাদান লোহা, কোবাল্ট, দস্তা, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, এবং আখরোট অন্তর্ভুক্ত।
ব্লগ – ০৩
লিখেছেনঃ মৌপিয়া দেব।