আর নয় Soft Drinks!!! কিন্তু কেন???
কোক, পেপসি, স্প্রাইট নাকি ফান্টা? একটু ভারী খাবারের পর ঠান্ডা-ঠান্ডা সফট ড্রিংকস না হলে যেন চলেই না! মনে কম-বেশি প্রশ্ন জাগেই যে, সফট ড্রিংকস খেতে এত আরাম লাগে কেন?
কারন কার্বনেটেড সফট ড্রিংকসগুলোর সাথে থাকে আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার, সুগার আর ক্যাফেইন, যা বিরিয়ানি, বার্গার, পিজ্জা জাতীয় ভারী, চর্বিজাতীয় খাবারগুলো খাওয়ার পর পরিপাকে যে শক্তি ব্যয় হতে থাকে তার বিপরীতে শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে তুলে। অনেকের ধারনা কোক-স্প্রাইট পাকস্থলির pH কমিয়ে অম্লীয় পরিবেশ তৈরী করে পরিপাকে সহায়তা করে, যা সম্পূর্ন ভুল! CDC (Centers for Disease Control and Prevention) সোর্স অনুযায়ী আর্টিফিশিয়ালি সুইটেন্ড সফট ড্রিংকসগুলো স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দন্তরোগ, কিডনি রোগ, লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, স্মৃতিভ্রংশ সহ বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত ঘটায়।

কিভাবে?

৩৫০ মি.লি. এর এক বোতল সফট ড্রিংকসে ৩০-৪৫ গ্রাম সুক্রোজ/ফ্রুক্টোজ দ্রবীভূত থাকে। ৭-১১ চা চামচ পরিমান যার সমতুল্য মিষ্টিজাতীয় কিছু একসাথে খেলে একজন সুস্থ, প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির সাথে-সাথে বমি হয়, কিন্তু সফট ড্রিংকসে থাকা ফসফরিক এসিড এই মিষ্টতা কমিয়ে দেয় বিধায় সাথে-সাথে বমি হয়না। এই পরিমান সুগার ২০ মিনিটের মধ্যে ব্লাড সুগার লেভেল আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি করে দেয়, ফলস্বরূপ মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসৃত হয় যা অতিরিক্ত সুগারকে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে ও শরীরের মেদ বাড়ায়। এই ফ্যাট লিভারে জমা হয়ে সময়ের সাথে ফ্যাটি লিভার ও লিভার সিরোসিসের মত রোগ ঘটায়। ফ্যাট আবার কোলেস্টেরলে রূপান্তরিত হয় ও রক্তে HDL (ভালো কোলেস্টেরল) এর পরিমান কমিয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন সহ একাধিক হৃদরোগের প্রধান কারন। আবার উচ্চ ব্লাড সুগার লেভেল টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পেছনে দায়ী, যা প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। রক্তে অতিরিক্ত সুগার লেভেল ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের প্রধান কারণ।

ফ্রুক্টোজ রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়, তখন অতিরিক্ত ফিল্ট্রেশন রেটের (রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ছাঁকন) কারনে কিডনি ফেইলর, স্থূলতা, হাড় ক্ষয়, আর্থাইটিস, নার্ভ ফেইলর এর মত রোগের সূত্রপাত ঘটে।

ছোটবেলায় আমাদের অনেককেই বড়রা কোক খেতে বাধা দিতেন, এর কারন কিন্তু একটি নয়! কার্বনেটেড সফট ড্রিংকসগুলোর সাথে থাকে কার্বনিক এসিড, ফসফরিক এসিড, ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড- ফলে pH ২.৫ থেকে ৩.৫ (গড় pH ৩.৪৪) হয়ে থাকে, যা অত্যন্ত এসিডিক। মুখগহ্বরের pH ৫.৫ এর নিচে নামলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে থাকে, যার ফল ডেন্টাল ক্যাভিটি।

তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে- ডায়েট সোডা বা কোক যাতে ফ্রুক্টোজ বা সুক্রোজ থাকে না, তা খেলে সমস্যা হবে কি?

হ্যাঁ, ডায়েট সোডাতে থাকে আর্টিফিশিয়াল সুগার- অ্যাসপারট্যাম অথবা স্যাকারিন- যার কারনে নিঃসৃত অতিরিক্ত ইনসুলিন সাধারন শারীরবৃত্তীয় কাজ বাধা দেয়, লিভার ও কিডনির আরো বেশি ক্ষতি সাধন করে। আর্টিফিশিয়াল সুগার উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যান্সারের মত রোগ ঘটায়! নিয়মিত কোক বা সোডা পানকারীদের লিভার ও কিডনি রোগ আর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি।

তাহলে আমাদের কি করা উচিত? সফট ড্রিংকস খাওয়া একদমই ছেড়ে দেয়া?

সম্ভব হলে তাই করা, তবে মাঝে মাঝে খেলে সমস্যা নেই।
ব্লগ – ০২
লিখেছেনঃ উম্মে নাজিজা প্রাপ্তি